ইসলাম ধর্মে দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজও ইবাদতের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে অজু (ওজু) রাখা মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নামাজ আদায় করার আগে এটি বাধ্যতামূলক। অনেকেই ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন। যেমন: “নখ কাটলে কি অজু ভেঙে যায়?”
বাংলাদেশে মুসলিম পরিবারে এই প্রশ্নটি সাধারণ। অনেক সময় আমরা দৈনন্দিন কাজ যেমন নখ কাটার সময়, চুল ছাঁটানোর সময় বা দাঁত মাজার সময় ভুলভাবে ভাবি যে অজু ভেঙে যাচ্ছে। এই ব্লগে আমরা ইসলামের মূল সূত্র অনুযায়ী জানব কখন অজু ভেঙে এবং কখন না, যাতে আপনার দৈনন্দিন জীবন সহজ এবং দ্বিধাহীন হয়।
আর পড়ুন-জানাজার নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
নখ কাটার সময় অজু ভাঙে কি?
ইসলামী শরিয়তে অজু ভাঙার বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নখ কাটার বিষয়টি সেই তালিকায় নেই। অর্থাৎ:
-
নখ কাটলে অজু ভেঙে না।
-
অজু তখনই ভেঙে যখন:
-
মূত্র বা মল বের হয় ।
-
পেট ফাঁপা বা গ্যাস নিঃসরণ হয় ।
-
ঘুমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়া ।
-
অসচেতন অবস্থায় কোনো কাজ ।
-
রক্তপাত বা অসাধারণ কিছু ঘটলে (যদি রক্ত বের হয় এবং শরীয়ত অনুযায়ী তা অজু ভাঙার কারণ হয়)
-
সুতরাং, নখ কাটা, চুল ছাঁটা, দাঁত মাজা, বা স্নানের জন্য শরীরের অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা করা অজু ভাঙায় না।
হাদিস এবং কুরআনের দিক থেকে ব্যাখ্যা
প্রথমত, কুরআনেই বলা হয়েছে যে আল্লাহ চান মুসলিমরা নামাজের জন্য সর্বদা পবিত্র থাকুক। কিন্তু নখ কাটার মতো দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতার কাজ অজু ভাঙার জন্য নয়, বরং সুন্নাহ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
একটি হাদিসে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন:
“নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা মুসলিমদের জন্য পবিত্রতা।”
[সহিহ মুসলিম]
অর্থাৎ, নখ কাটানো, চুল ছাঁটা, দাঁত মাজা এগুলো পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করে, যা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নখ কাটার সুন্নাহ এবং সময়
নখ কাটার সুন্নাহও রয়েছে। কিছু নিয়ম ও নির্দেশনা:
-
শুক্রবার – অনেক হাদিসে বলা হয়েছে, শুক্রবার নখ কাটার সুন্নাহ।
-
সন্ধ্যার আগে বা সকালে – নখ কাটা সাধারণত সকালে সুন্নাহ, তবে জরুরি হলে যেকোনো সময় করতে পারেন।
-
অজু থাকা অবস্থায় – অজু থাকা বা না থাকা নখ কাটার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
-
সফাই নিশ্চিত করা – নখ কাটার সময় নখ এবং হাত-ফুটের পরিচ্ছন্নতা রাখা উত্তম।
বাংলাদেশে ঘরে ঘরে মানুষ স্বাভাবিকভাবে সপ্তাহে একবার নখ কাটে, যা শরীরের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অজু ভাঙার মূল কারণ
নখ কাটার কারণে অজু ভাঙে না, তবে নিচের বিষয়গুলো অজু ভাঙার কারণ হতে পারে:
| কারণ | বিস্তারিত |
|---|---|
| মূত্র বা মল নির্গমন | ছোট-বড় পায়খানা হলে অজু ভেঙে যায় |
| গ্যাস নির্গমন | অজু ভেঙে যায় |
| ঘুম | দীর্ঘ অজ্ঞান অবস্থায় অজু ভেঙে যেতে পারে |
| রক্তপাত | যদি শরীয়ত অনুযায়ী রক্তপাতে অজু ভাঙার কারণ হয় |
| অসচেতন অবস্থায় কাজ | অজু ভাঙার কারণ হতে পারে |
এগুলো মনে রাখলে দৈনন্দিন জীবনে বিভ্রান্তি কমে যাবে।
নখ কাটার অন্যান্য সুবিধা
নখ কাটা কেবল সুন্নাহ বা পরিচ্ছন্নতার অংশ নয়, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। নখ কাটার কিছু প্রধান সুবিধা হলো:
-
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে: নিয়মিত নখ কাটা হাত-পা পরিচ্ছন্ন রাখে এবং ময়লা জমতে দেয় না।
-
ইনফেকশন কমায়: দীর্ঘ বা অগোছালো নখ ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস জমার কারণ হতে পারে। নিয়মিত নখ কাটা এই ঝুঁকি কমায়।
-
স্বাস্থ্যকর স্বভাব গড়ে তোলে: শিশুদের জন্য এটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করে।
-
সুন্নাহ অনুসরণ: নবী করিম (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নখ কাটার অভ্যাস প্রতিদিনের জীবনে পালনযোগ্য।
-
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে: পরিচ্ছন্ন হাত-পা ও নখ দেখলে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।
-
ব্যথা ও দুর্ঘটনা কমায়: বড় নখ কখনও হাতে বা পায়ে আঘাতের কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাটা ব্যথা ও দুর্ঘটনা এড়ায়।
বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য টিপস
-
নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা – নখ কাটা, চুল ছাঁটা, দাঁত মাজা।
-
অজু ভাঙার বিভ্রান্তি দূর করা – শুধু উল্লেখিত কারণে অজু ভাঙে।
-
পরিচ্ছন্ন হাত ও পা – নামাজের আগে সব সময় হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে।
-
সুন্নাহ অনুসরণ – শুক্রবার নখ কাটার চেষ্টা করুন।
প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১: নখ কাটার সময় কি অজু থাকা দরকার?
উত্তর: না, নখ কাটার জন্য অজু থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ২: যদি রক্ত বের হয় নখ কাটার সময়, অজু ভেঙে কি?
উত্তর: ছোট নখ কাটার সময় সামান্য রক্ত বের হলেও সাধারণত অজু ভাঙে না, তবে যদি শরীয়ত অনুযায়ী তা গুরুতর হয়, তবে হুজুরের পরামর্শ নিতে পারেন।
প্রশ্ন ৩: নামাজের আগে কি নখ কাটা উচিত?
উত্তর: নামাজের আগে বা পরে যেকোনো সময় নখ কাটা যায়। সুন্নাহ অনুসারে শুক্রবার নখ কাটার পরামর্শ আছে।
প্রশ্ন ৪: নখ কাটার অন্যান্য সুবিধা কী?
উত্তর: নখ কাটার মাধ্যমে হাত-পা পরিচ্ছন্ন থাকে, ইনফেকশন কমে এবং সুন্নাহ অনুসরণ হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশী মুসলিমরা প্রায়শই বিভ্রান্ত হন যে নখ কাটলে অজু ভেঙে কি। ইসলামিক শরীয়তের আলোকে এটি পরিষ্কার যে নখ কাটলে অজু ভাঙে না। নখ কাটা, চুল ছাঁটা, দাঁত মাজা এগুলো সুন্নাহ এবং পরিচ্ছন্নতার অংশ। তাই অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
নিয়মিত পরিচ্ছন্ন থাকুন, সুন্নাহ অনুসরণ করুন, এবং অজু ভাঙার মূল কারণগুলো মনে রাখুন।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-রমজান ২০২৬ কত দিন বাকি, প্রস্তুতি শুরু করেছেন?
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


