বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। পড়াশোনা, অফিসের কাজ, অনলাইন ব্যবসা, বিনোদন—সবকিছুই এখন দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। ঠিক এই সময়েই বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ৫জি (5G) প্রযুক্তি।
অনেকেই জানতে চান—বাংলাদেশে কি সত্যিই ৫জি চালু হয়েছে? হলে কোন কোন সিম কোম্পানি এই সেবা দিচ্ছে? সাধারণ মানুষ কি এখনই ৫জি ব্যবহার করতে পারবে?
এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় জানবো বাংলাদেশে ৫জি চালু করেছে কোন কোন সিম কোম্পানি, কোথায় কোথায় এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে, ৫জি ব্যবহার করতে কী লাগবে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী হতে পারে।
আর পড়ুন- মোবাইল সিম হারিয়ে গেলে বা ব্যবহার না করলে কীভাবে সিম বন্ধ করবেন?
৫জি কী? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
৫জি হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্ম। এটি ৪জির তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও শক্তিশালী।
৫জির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
-
অত্যন্ত দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড।
-
কম লেটেন্সি (ডাটা আদান-প্রদানে সময় কম লাগে)।
-
একই সঙ্গে অনেক ডিভাইস সংযুক্ত করার ক্ষমতা।
-
উন্নত ভিডিও কল ও স্ট্রিমিং সুবিধা।
এই প্রযুক্তি শুধু মোবাইল ইন্টারনেট নয়, ভবিষ্যতের স্মার্ট সিটি, আইওটি (IoT), স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট ও ডিজিটাল সেবার ভিত্তি তৈরি করবে।
বাংলাদেশে ৫জি চালুর বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি (BTRC)। তাদের অনুমোদনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে দেশে ৫জি প্রযুক্তি চালু হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৫জি পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে সব জায়গায় চালু না হলেও, বেশ কয়েকটি সিম কোম্পানি পরীক্ষামূলক (Trial / Pilot) পর্যায়ে ৫জি সেবা শুরু করেছে।
বাংলাদেশে ৫জি চালু করেছে কোন কোন সিম কোম্পানি?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মোট চারটি মোবাইল অপারেটর ৫জি নিয়ে কাজ করছে। নিচে প্রতিটি অপারেটরের অবস্থা আলাদা করে আলোচনা করা হলো—
গ্রামীণফোন (Grameenphone) – ৫জি আপডেট
গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর।
✔ গ্রামীণফোন পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করেছে
✔ ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ৫জি ট্রায়াল দেখা গেছে
✔ কর্পোরেট ও বিশেষ ইভেন্টে ৫জি ডেমো পরিচালনা করা হয়েছে
গ্রামীণফোন জানিয়েছে, পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম ও নীতিগত সহায়তা পেলে তারা দ্রুত ৫জি সেবা সম্প্রসারণ করতে প্রস্তুত।
রবি (Robi Axiata) – ৫জি আপডেট
রবি অ্যাক্সিয়াটা লিমিটেডও ৫জি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই।
✔ রবি ৫জি ট্রায়াল নেটওয়ার্ক চালু করেছে
✔ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনী ও নির্দিষ্ট এলাকায় পরীক্ষা চালানো হয়েছে
✔ ৫জি নিয়ে গবেষণা ও প্রস্তুতি কার্যক্রম চলমান
রবির লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে ৫জি দিয়ে স্মার্ট এডুকেশন ও ডিজিটাল সার্ভিসে ভূমিকা রাখা।
বাংলালিংক (Banglalink) – ৫জি আপডেট
বাংলালিংকও ৫জি প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
✔ সীমিত পরিসরে ৫জি ট্রায়াল চালু
✔ ঢাকাসহ কিছু শহরে পরীক্ষামূলক সিগন্যাল
✔ তরুণ ও ডিজিটাল গ্রাহকদের জন্য প্রস্তুতি
বাংলালিংক ভবিষ্যতে উচ্চগতির ডেটা সেবায় গুরুত্ব দিচ্ছে।
টেলিটক (Teletalk) – ৫জি আপডেট
সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশে ৫জি পরীক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
✔ সরকারি উদ্যোগে ৫জি ট্রায়াল চালু
✔ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ও প্রযুক্তি মেলায় ৫জি প্রদর্শন
✔ সরকারি ডিজিটাল প্রকল্পে ৫জি ব্যবহার পরিকল্পনা
টেলিটককে অনেকেই বাংলাদেশের ৫জি পরীক্ষার পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখেন।
কোন কোন এলাকায় ৫জি পাওয়া যাচ্ছে?
বর্তমানে ৫জি পুরো বাংলাদেশে নয়। পরীক্ষামূলকভাবে পাওয়া যাচ্ছে—
-
ঢাকা (নির্দিষ্ট এলাকা)
-
চট্টগ্রাম
-
সিলেট
-
রাজশাহী
-
খুলনা
📌 মনে রাখতে হবে, এসব এলাকাতেও ৫জি সিগন্যাল স্থায়ী নাও হতে পারে।
৫জি ব্যবহার করতে কী কী লাগবে?
৫জি ব্যবহার করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে—
✔ ৫জি সাপোর্টেড স্মার্টফোন।
✔ ৪জি/৫জি সক্ষম সিম।
✔ অপারেটরের ৫জি কভারেজ এলাকায় অবস্থান।
✔ নেটওয়ার্ক সেটিংসে ৫জি অন করা।
সাধারণ সিম বদলানোর প্রয়োজন সাধারণত হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে সিম আপগ্রেড দরকার হতে পারে।
বাংলাদেশে ৫জি চালু হলে কী সুবিধা হবে?
৫জি পুরোপুরি চালু হলে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা পাবেন—
🚀 আল্ট্রা ফাস্ট ইন্টারনেট।
🎥 নিরবচ্ছিন্ন HD ভিডিও ও লাইভ স্ট্রিমিং।
🎮 অনলাইন গেমিংয়ে ল্যাগ কম।
🏥 টেলিমেডিসিন ও স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা।
🏙️ স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সুবিধা।
প্রশ্ন–উত্তর
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশে কি ৫জি পুরোপুরি চালু হয়েছে?
না, এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
প্রশ্ন ২: কোন সিম কোম্পানি ৫জি চালু করেছে?
গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু করেছে।
প্রশ্ন ৩: সাধারণ মানুষ কি এখনই ৫জি ব্যবহার করতে পারবে?
কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিতভাবে সম্ভব, তবে সবার জন্য নয়।
প্রশ্ন ৪: ৫জি ব্যবহার করতে নতুন সিম লাগবে?
সাধারণত না, তবে ফোন ও সিম ৫জি সাপোর্টেড হতে হবে।
প্রশ্ন ৫: ৫জি কবে পুরো বাংলাদেশে চালু হবে?
এ বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হয়নি।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে ৫জি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, যদিও এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক—এই চারটি সিম কোম্পানি ধাপে ধাপে ৫জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী দিনে নীতিগত সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ৫জি পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে—এমনটাই আশা করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম (আপডেট)
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


