বর্তমান সময়ে মোবাইল নম্বর শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়। ব্যাংকিং OTP, বিকাশ-নগদ, ফেসবুক, জিমেইল, এমনকি সরকারি সেবাও এখন একটি মোবাইল নম্বরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এখনো অসংখ্য মানুষ অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করছেন।
অনেক সময় বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়ের নামে নেওয়া সিম দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আইনগত ও নিরাপত্তার দিক থেকে এটি একটি বড় ঝুঁকি। এজন্য সরকার ও বিটিআরসি (BTRC) নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ব্যবহৃত সিম অবশ্যই নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বা মালিকানা পরিবর্তন করা জরুরি।
এই পোস্টে আমরা খুব সহজ ও পরিষ্কার ভাষায় জানবো—
মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন কী, কেন দরকার, কীভাবে করবেন এবং কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
আর পড়ুন- মোবাইল সিম হারিয়ে গেলে বা ব্যবহার না করলে কীভাবে সিম বন্ধ করবেন?
মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়?
মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন বলতে বোঝায়—
👉 বর্তমানে যে সিমটি অন্য কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা আছে, সেটিকে নিজের NID-তে স্থানান্তর করা।
এই প্রক্রিয়ায়—
-
সিম নম্বর অপরিবর্তিত থাকে।
-
শুধু সিমের আইনগত মালিক পরিবর্তন হয়।
-
নতুন মালিক হিসেবে আপনার নাম ও NID যুক্ত হয়।
কেন মোবাইল সিম নিজের নামে নেওয়া জরুরি?
বাংলাদেশে সিম নিজের নামে না থাকলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যেমন—
-
হঠাৎ করে সিম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
-
মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে সমস্যা।
-
ফোন হারালে বা সিম চুরি হলে উদ্ধার কঠিন।
-
আইনগত জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা।
বিশেষ করে বর্তমানে সরকার সিম ব্যবহারে কঠোর হওয়ায় অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম যেকোনো সময় বাতিল হতে পারে।
মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম (আপডেট)
এখন আসি মূল বিষয়ে—সিমের মালিকানা পরিবর্তন করবেন কীভাবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক বা টেলিটক—সব অপারেটরের ক্ষেত্রেই নিয়ম প্রায় একই।
মূল শর্ত (খুব গুরুত্বপূর্ণ)
সিমের মালিকানা পরিবর্তনের সময়—
-
বর্তমান সিম মালিক
-
নতুন সিম মালিক
👉 দু’জনকেই একসাথে উপস্থিত থাকতে হবে।
👉 দু’জনেরই জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
অনলাইন বা ফোনে এই কাজ করা যায় না।
সিমের মালিকানা পরিবর্তনে যেসব কাগজপত্র লাগবে
অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যাওয়ার আগে নিচের জিনিসগুলো সঙ্গে রাখুন—
-
বর্তমান সিম মালিকের মূল NID।
-
নতুন মালিকের মূল NID।
-
সংশ্লিষ্ট সিম কার্ড।
-
উভয় ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট (বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের জন্য)।
👉 ফটোকপি সাধারণত গ্রহণ করা হয় না।।
কোথায় গিয়ে সিমের মালিকানা পরিবর্তন করবেন?
মালিকানা পরিবর্তনের জন্য অবশ্যই যেতে হবে—
-
গ্রামীণফোন সেন্টার।
-
রবি এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার।
-
বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার পয়েন্ট।
-
টেলিটক কাস্টমার কেয়ার অফিস।
📌 মনে রাখবেন:
লোকাল মোবাইল রিচার্জ বা দোকানে এই সার্ভিস পাওয়া যায় না।
ধাপে ধাপে সিম মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া
পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত এভাবে হয়—
-
দু’জন একসাথে অপারেটরের অফিসে যাবেন।
-
কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে মালিকানা পরিবর্তনের কথা বলবেন।
-
উভয়ের NID যাচাই করা হবে।
-
বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হবে।
-
সিস্টেমে নতুন মালিকের তথ্য আপডেট করা হবে।
-
কাজ সম্পন্ন হওয়ার কনফার্মেশন দেওয়া হবে।
⏱️ সাধারণত ১০–৩০ মিনিটের মধ্যেই কাজ শেষ হয়।
সিমের মালিকানা পরিবর্তনে কি কোনো খরচ লাগে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে—
-
মালিকানা পরিবর্তন ফ্রি
-
কিছু অপারেটর সামান্য সার্ভিস চার্জ নিতে পারে
তবে বড় কোনো ফি সাধারণত নেওয়া হয় না।
মালিকানা পরিবর্তনের পর যেসব কাজ করা জরুরি
সিম নিজের নামে নেওয়ার পর এই কাজগুলো করতে ভুলবেন না—
-
বিকাশ / নগদ / রকেট তথ্য আপডেট।
-
ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নম্বর যাচাই।
-
গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়া চেক।
-
জরুরি কন্টাক্ট সংরক্ষণ।
এতে ভবিষ্যতে ঝামেলা কম হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
-
একজন NID দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি সিম রাখা যায় না।
-
ভুল বা ভুয়া তথ্য দিলে সিম স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে পারে।
-
অন্যের NID ব্যবহার করা আইনগত অপরাধ।
-
মালিকানা পরিবর্তন না করলে সিম ব্লক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: অনলাইনে কি সিমের মালিকানা পরিবর্তন করা যায়?
উত্তর: না, বর্তমানে সরাসরি অপারেটরের অফিসে যেতে হয়।
প্রশ্ন ২: বর্তমান মালিক না গেলে কি হবে?
উত্তর: হবে না। দু’জনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন ৩: মালিকানা পরিবর্তনের পর নম্বর বদলায় কি?
উত্তর: না, নম্বর একই থাকে।
প্রশ্ন ৪: কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ১০–৩০ মিনিট।
উপসংহার
মোবাইল সিমের মালিকানা পরিবর্তন এখন আর বিলাসিতা নয়—এটি একটি অত্যন্ত জরুরি ও দায়িত্বশীল কাজ। নিজের ব্যবহৃত সিম যদি অন্যের নামে থাকে, তাহলে যেকোনো সময় আপনি আইনগত ও আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারেন।
সঠিক নিয়ম মেনে, অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সিম রেজিস্ট্রেশন করাই সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত। আজই এই কাজটি করে ফেললে ভবিষ্যতের বড় ঝামেলা থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-মাত্র ৫ মিনিটে মোবাইল সিম বন্ধ করার সহজ উপায়(আপডেট)
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


