ইসলামের দাওয়াত ও ঈমানি মেহনতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো তাবলিগ জামাত। যুগে যুগে এই জামাতের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ নামাজ, সুন্নাহ ও আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও দাওয়াতি মেহনতকে আরও গতিশীল করতে তাবলিগের খুরুজের জোড় শুরু হচ্ছে ২ জানুয়ারি ২০২৬।
বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমা ও আঞ্চলিক জোড়ের পর এই খুরুজের জোড় মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করে। অনেকেই জানতে চান—খুরুজ কী, জোড় কেন হয়, এতে কারা অংশ নিতে পারেন এবং কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। এই লেখায় আমরা সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় সেসব বিষয়ই বিস্তারিত তুলে ধরব।
আর পড়ুন-নখ কাটলে কি অজু ভেঙে যায়? মুসলিমদের জন্য বিস্তারিত গাইড
তাবলিগের খুরুজ কী?
খুরুজ শব্দের অর্থ হলো “বের হওয়া”। তাবলিগ জামাতের পরিভাষায় খুরুজ বলতে বোঝায়—
👉 আল্লাহর পথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের ঘর, ব্যবসা ও দুনিয়াবি ব্যস্ততা ছেড়ে দাওয়াত ও ইসলাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।
খুরুজ সাধারণত হয়—
-
৩ দিন
-
১০ দিন
-
৪০ দিন
-
৪ মাস
এই সময়ের মধ্যে মুসল্লিরা মসজিদে অবস্থান করে নামাজ, তালীম, জিকির ও দাওয়াতি কাজ করেন।
খুরুজের জোড় কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
খুরুজের জোড় হলো এমন একটি বড় সমাবেশ, যেখানে একাধিক এলাকার মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে—
-
দাওয়াতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ।
-
খুরুজের জন্য জামাত (গ্রুপ) তৈরি হয় ।
-
সময় ও জায়গা নির্ধারণ করা হয় ।
-
আমির ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয় ।
👉 ২ জানুয়ারি ২০২৬-এর খুরুজের জোড়টি তাই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি নতুন বছরের শুরুতেই দাওয়াতি কাজকে জোরদার করবে।
খুরুজের জোড় শুরু: ২ জানুয়ারি ২০২৬
বিশ্ব ইজতেমা ও আঞ্চলিক জোড়ের ধারাবাহিকতায়
📌 ২ জানুয়ারি ২০২৬ (শুক্রবার) থেকে বিভিন্ন মারকাজ ও বড় মসজিদে খুরুজের জোড় শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
এই জোড়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে—
-
নতুন জামাত গঠন ।
-
বিভিন্ন জেলা ও এলাকায় দাওয়াত পাঠানো ।
-
৪০ দিন ও ৪ মাসের জামাত প্রস্তুত
হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
🇧🇩 বাংলাদেশে খুরুজের জোড়ের গুরুত্ব
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কাজ অত্যন্ত সুসংগঠিত ও বিস্তৃত। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে নিয়মিত জোড় অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুরুজের জোড় গুরুত্বপূর্ণ কারণ—
-
নতুন প্রজন্ম দাওয়াতি কাজে যুক্ত হয় ।
-
মসজিদকেন্দ্রিক দ্বীনি পরিবেশ তৈরি হয় ।
-
সমাজে নামাজ ও আমলের সচেতনতা বাড়ে ।
-
ভ্রাতৃত্ব ও উম্মাহর বন্ধন মজবুত হয় ।
কারা খুরুজে যেতে পারবেন?
খুরুজে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়স বা পেশার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সাধারণত—
✔️ নামাজ আদায়কারী মুসলমান ।
✔️ পরিবারের অনুমতি আছে ।
✔️ শারীরিকভাবে সক্ষম ।
✔️ হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা নিশ্চিত ।
এমন ব্যক্তিরাই খুরুজে অংশ নেন।
খুরুজে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
খুরুজের জোড়ে অংশ নিতে চাইলে আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি—
✅ মানসিক প্রস্তুতি
-
নিয়ত ঠিক করা (শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) ।
-
ধৈর্য ও ত্যাগের মানসিকতা ।
✅ পারিবারিক প্রস্তুতি
-
পরিবারকে সময় দেওয়া ।
-
খরচ ও দায়িত্ব গুছিয়ে রাখা ।
✅ প্রয়োজনীয় সামগ্রী
-
জায়নামাজ ।
-
কোরআন শরিফ ।
-
প্রয়োজনীয় কাপড় ।
-
ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস ।
নারীরা কীভাবে দাওয়াতি কাজে অংশ নেন?
১️।নিজ ঘরে থেকেই দাওয়াতি কাজ
এটাই সবচেয়ে প্রচলিত ও অনুমোদিত পদ্ধতি।
-
বাড়িতে তালীম (ফাজায়েলে আমল, হাদিস পাঠ) ।
-
নামাজ, পর্দা ও সুন্নাহর চর্চা ।
-
সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া ।
-
আত্মীয় ও প্রতিবেশী নারীদের মাঝে দাওয়াত ।
২️।মাহরামের সঙ্গে স্বল্প সময়ের সফর (খাস শর্তে)
কিছু ক্ষেত্রে—
-
স্বামী বা মাহরাম (বাবা, ভাই) সঙ্গে থাকলে ।
-
সম্পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে ।
-
আলাদা ব্যবস্থা থাকলে ।
👉 তখন নারীরা সংক্ষিপ্ত সময়ের দাওয়াতি সফরে অংশ নিতে পারেন
তবে এটি সাধারণ খুরুজের মতো নয় এবং স্থানীয় আমির/মুরুব্বিদের অনুমতি প্রয়োজন।
নারীদের জন্য আলাদা তাবলিগি ব্যবস্থা
তাবলিগ জামাতে নারীদের জন্য রয়েছে—
-
মাস্তুরাত তালীম ।
-
ঘরভিত্তিক জোড় ।
-
নির্দিষ্ট দিনে মহিলা বয়ান ।
-
পরিবারভিত্তিক দ্বীনি সফর (মাহরামসহ) ।
এগুলোই নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও শরিয়তসম্মত পথ।
ইসলামের দৃষ্টিতে মূল কথা
ইসলামে নারীদের প্রধান দায়িত্ব—
-
নিজ ঘরকে দ্বীনি ঘর বানানো ।
-
সন্তানদের ঈমানদার হিসেবে গড়ে তোলা ।
-
পর্দা ও হায়া রক্ষা করা ।
এই কাজগুলোও আল্লাহর কাছে খুরুজের সমপর্যায়ের সওয়াবের কারণ হতে পারে—নিয়ত সহকারে করলে।
খুরুজের ফজিলত ও উপকারিতা
খুরুজ শুধু দাওয়াত নয়, বরং এটি একজন মুসলমানের আত্মশুদ্ধির বড় মাধ্যম।
🔹 ঈমান মজবুত হয় ।
🔹 নামাজে একাগ্রতা বাড়ে ।
🔹 গুনাহ থেকে বাঁচার শক্তি আসে ।
🔹 আল্লাহর উপর ভরসা তৈরি হয় ।
🔹 দুনিয়ার মোহ কমে ।
নতুনদের জন্য বিশেষ পরামর্শ
যারা প্রথমবার খুরুজে যেতে চান, তাদের জন্য—
-
আগে ৩ দিনের খুরুজে যাওয়াই উত্তম ।
-
এলাকার জিম্মাদার বা মুরুব্বির সঙ্গে কথা বলা ।
-
জোড়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকা ।
-
প্রশ্ন করতে সংকোচ না করা ।
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: খুরুজের জোড়ে অংশ নেওয়া কি ফরজ?
উত্তর: না, এটি ফরজ নয়। তবে নফল ইবাদতের মতোই এর অনেক ফজিলত রয়েছে।
প্রশ্ন ২: চাকরিজীবীরা কি খুরুজে যেতে পারেন?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে ছুটি ও দায়িত্ব ঠিক করে নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ৩: খুরুজে গেলে কি কোনো খরচ দেওয়া হয়?
উত্তর: সাধারণত নিজ খরচেই যেতে হয়।
প্রশ্ন ৪: নারীরা কি খুরুজে যেতে পারেন?
উত্তর: নারীদের জন্য আলাদা নিয়ম রয়েছে এবং মাহরাম ছাড়া অনুমোদিত নয়।
প্রশ্ন ৫: খুরুজের জোড় কোথায় হবে?
উত্তর: স্থানীয় মারকাজ বা বড় মসজিদে—এ বিষয়ে এলাকার জিম্মাদারের কাছ থেকে জানা যাবে।
উপসংহার
তাবলিগের খুরুজের জোড় শুরু ২ জানুয়ারি ২০২৬—এই তারিখটি হতে পারে আপনার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে একটু সময় বের করে আল্লাহর পথে বের হওয়াই তাবলিগের মূল শিক্ষা।
আপনি যদি দ্বীনের জন্য কিছু করতে চান, নিজের ঈমান মজবুত করতে চান, তবে এই খুরুজের জোড় হতে পারে আপনার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই দাওয়াতে শরিক হওয়ার তৌফিক দান করুন—আমিন।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-রমজান ২০২৬ কত দিন বাকি, প্রস্তুতি শুরু করেছেন?
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


