আমাদের Telegram চ্যানেলে যুক্ত হোন

রিজিকে সচ্ছলতা আসে যে আমলে?

রিজিক মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা প্রতিদিনই আল্লাহর কাছে দোয়া করি—“হে আল্লাহ, আমাদের রিজিকে বরকত দান করুন।” কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এমন একটি সময় ছিল যখন মানুষের জীবনে অভাব প্রায় ছিল না। যাকাত দেওয়ার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যেত না, রাষ্ট্রের কোষাগার পরিপূর্ণ থাকত এবং সাধারণ মানুষও স্বচ্ছল জীবনযাপন করত।

আর পড়ুন-ওমরাহ ও হজ্জ মূল পার্থক্য

রিজিকে সচ্ছলতা আসে যে আমলে? (মূল আলোচনা)

ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে সচ্ছল সময়

ইতিহাসবিদ ও ইসলামি গবেষকদের মতে, খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহঃ)–এর শাসনামলেই রিজিকে সর্বাধিক সচ্ছলতা এসেছিল।

এই সময়কাল ছিল উমাইয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত, আনুমানিক ৭১৭–৭২০ খ্রিস্টাব্দ

কেন এই আমলে রিজিকে সচ্ছলতা এসেছিল?

১. ন্যায়বিচারভিত্তিক শাসন

খলিফা উমর (রহঃ) ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি ক্ষমতায় এসেই দুর্নীতি বন্ধ করেন, অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনেন।

২. যাকাত ও বায়তুল মালের সঠিক ব্যবহার

এই আমলে যাকাত এমনভাবে বণ্টন করা হতো যে, অনেক অঞ্চলে যাকাত নেওয়ার মতো গরিব খুঁজে পাওয়া যেত না

৩. সুদ ও জুলুমমুক্ত অর্থনীতি

ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত নেমে আসে।

৪. আমানতদার শাসক ও কর্মকর্তা

রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে আল্লাহভীতি ও জবাবদিহিতা ছিল, যা রিজিকের বরকতের অন্যতম কারণ।

শাসকের ব্যক্তিগত জীবনে যখন বিলাসিতা থাকে না

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, যে আমলে শাসক নিজে সাধারণ জীবনযাপন করতেন, সে আমলেই জনগণের রিজিকে সচ্ছলতা এসেছে।
খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহঃ) ক্ষমতায় এসে রাজকীয় পোশাক ও ভোগবিলাস ত্যাগ করেন। এর প্রভাব পুরো সমাজে পড়ে।

👉 শিক্ষা:
শাসকের তাকওয়া ও আত্মসংযম = জনগণের রিজিকে বরকত

যখন শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি দেওয়া হতো

সেই আমলে শ্রমিকদের অধিকার পূর্ণভাবে রক্ষা করা হতো। ইসলামি নীতিতে বলা হয়েছে—

“শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও।”

এই নীতি বাস্তবায়িত হওয়ায় অর্থ সমাজে আটকে থাকত না, বরং প্রবাহিত হতো।

👉 ফলাফল:
অর্থনীতিতে গতি আসে → কর্মসংস্থান বাড়ে → রিজিকের সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়।

যখন জমি ও কৃষক অবহেলিত ছিল না

সচ্ছলতার যুগে কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

  • পতিত জমি চাষে উৎসাহ।

  • কৃষকের উপর জুলুম কমানো।

  • অযথা কর বাতিল।

এতে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যায় এবং দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক থাকে।

👉 শিক্ষা:
যে আমলে কৃষক হাসে, সে আমলেই রিজিক বাড়ে।

যখন দোয়া ও ইবাদত ছিল রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির অংশ

সেই সময় রাষ্ট্র শুধু প্রশাসন চালাত না, বরং জনগণকে—

  • নামাজে অভ্যস্ত করা।

  • তাকওয়ার শিক্ষা দেওয়া।

  • হারাম থেকে দূরে রাখা।

এই কাজগুলোও করত।

আল্লাহর রহমত তখনই আসে, যখন একটি জাতি সামষ্টিকভাবে তাঁর দিকে ফিরে আসে।

যখন বিচারব্যবস্থা ছিল দ্রুত ও নিরপেক্ষ

সচ্ছলতার যুগে—

  • ধনী ও গরিবের বিচার এক ছিল।

  • মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকত না।

এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা তৈরি হয় এবং মানুষ বিনিয়োগে উৎসাহ পায়।

👉 অর্থনীতি সচল = রিজিকে প্রশস্ততা

যখন সুদ ও ঘুষ সমাজ থেকে প্রায় বিলুপ্ত ছিল

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সুদ ও ঘুষ যখন কমে যায়—

  • অর্থের বরকত বাড়ে।

  • ধনী আরও দায়িত্বশীল হয়।

  • গরিব স্বাবলম্বী হয়।

এই কারণেই সেই আমলে সম্পদ থাকা সত্ত্বেও লোভ ছিল কম।

যখন দান-সদকা ছিল সামাজিক অভ্যাস

মানুষ তখন শুধু যাকাত নয়—

  • নফল সদকা।

  • পথচারীর সহায়তা।

  • আত্মীয়ের খোঁজখবর।

এসব নিয়মিত করত।

👉 আশ্চর্য হলেও সত্য—
দান যত বাড়ে, রিজিক তত প্রশস্ত হয়।

যখন ভোগ নয়, কৃতজ্ঞতা ছিল মানুষের পরিচয়

সচ্ছলতার যুগে মানুষ বেশি খরচ করত না, বরং বেশি শুকর আদায় করত।

আল্লাহ বলেন—

“তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও দেব।”

এই কৃতজ্ঞতাই রিজিকে স্থায়ী করেছিল।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে রিজিকের সচ্ছলতা

আল্লাহ তাআলা বলেন—

“যদি কোনো জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকত খুলে দিতাম।”
— (সূরা আল-আ’রাফ: ৯৬)

এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, ঈমান ও তাকওয়াই রিজিকে সচ্ছলতার মূল চাবিকাঠি।

বর্তমান সময়ে কীভাবে রিজিকে সচ্ছলতা আনা সম্ভব?

বাংলাদেশসহ বর্তমান সমাজে যদি আমরা—

  • ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ি।

  • সুদ ও দুর্নীতি পরিহার করি।

  • যাকাত ও সদকা সঠিকভাবে আদায় করি।

  • হালাল রিজিকের প্রতি গুরুত্ব দিই।

তবে ইনশাআল্লাহ আবারও রিজিকে সচ্ছলতা ফিরে আসতে পারে।

প্রশ্ন-উত্তর

❓ রিজিকে সচ্ছলতা বলতে কী বোঝায়?

👉 অভাবমুক্ত জীবন, হালাল উপার্জন ও সম্পদে বরকত থাকাকে রিজিকে সচ্ছলতা বলা হয়।

❓ ইসলামে সবচেয়ে সচ্ছল যুগ কোনটি?

👉 খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহঃ)-এর শাসনামল।

❓ কেন সেই সময় মানুষ যাকাত নিতে চাইত না?

👉 কারণ মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়ে যেত এবং অর্থনৈতিক সুবিচার ছিল।

❓ বর্তমান যুগে রিজিক বাড়ানোর উপায় কী?

👉 হালাল উপার্জন, নিয়মিত নামাজ, যাকাত ও তাকওয়া অবলম্বন।

উপসংহার

রিজিকে সচ্ছলতা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি আসে আল্লাহভীতি, ন্যায়বিচার ও ইসলামী জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহঃ)-এর শাসনামলেই রিজিকের প্রকৃত সচ্ছলতা দেখা গিয়েছিল।

আজও যদি আমরা সেই আদর্শ অনুসরণ করি, তবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব পর্যায়েই আল্লাহর বরকত নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ।

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

আরও পড়ুন-মুসলমানদের ইতিহাস ইসলামের সূচনা থেকে বিশ্বজয়

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

বাংলা টেক নিউজ টিম একটি অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল ও পেশাদার কনটেন্ট রাইটারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি লেখক দল, যারা বাংলা ভাষায় নির্ভুল, তথ্যভিত্তিক ও পাঠক-বান্ধব কনটেন্ট তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের প্রতিটি লেখক প্রযুক্তি, ব্রেকিং নিউজ, অনলাইন আয়, স্বাস্থ্য, লাইফস্টাইল, ডিজিটাল ট্রেন্ড ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গভীর গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে থাকেন।